এম,এ আহমদ আজাদ,নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)
“আমি কারে নিয়ে ঈদ করমু, কে আমার পুয়াপুরিরের ( ছেলে মেয়ে) ঈদের কাপড় আইন্না দিবু আর কে পালবু আমারের” ‘কইলানো আজকে ঈদের বাজারে নতুন কাপড় কিনবা’ আমরারের তইয়া তাইন নতুন কাপড় পইড়া যাইনগি দেখি’ এই বলে কেঁদে কেঁদে মুর্চা যাচ্ছিলেন নিহত কাইয়ূমের স্ত্রী শেখ মিনা বেগম।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সদরঘাট গ্রামে ঈদগাহে ঈদের জামাত পড়া নিয়ে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে শেখ আব্দুল কাইয়ুম (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ মর্গে পাঠালে সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল ৪টায় লাশ বাড়ি নিয়ে আশা হয়। এসময় নিহত ব্যক্তির বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তার আত্বীয় স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠে। সৃষ্টি হয় সবার মধ্যে শোকাহত পরিবেশ। পওে লাশ তাদের পারিবারিব কবর স্থানে দাফন করা হয়।
শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামের পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শেখ আব্দুল কাইয়ুম (৫০) নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- নবীগঞ্জ উপজেলার সদরঘাট গ্রামের দক্ষিণপাড়া ও পশ্চিম পাড়ার অধিকাংশ লোকজন প্রত্যেক বছর সদরঘাট দক্ষিণপাড়া এলাকায় অবস্থিত সৈয়দ আলী ঈদগাহে ঈদের জামাত আদায় করেন। সম্প্রতি সৈয়দ আলী ঈদগাহের জায়গার ওয়াকফের কাগজ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ঈদগাহে ঈদের জামাত পড়া নিয়ে পশ্চিমপাড়ার লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজের পর ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত পড়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সদরঘাট গ্রামের দক্ষিণপাড়া ও পশ্চিম পাড়ার মুরুব্বিয়ানরা সদরঘাট গ্রামের পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদে জড়ো হন।এসময় নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট দক্ষিন পাড়া জামে মসজিদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় একই গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদেও পুত্রন আব্দুল কাইয়ুম (৫৫) ও কাজী সুন্দর আলীর পুত্র কাজী মুজাহিদ আলী (৩৫) এর মধ্যে।
এসময় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে মুরুব্বিয়ানরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আসার সময় মসজিদের সামনে ওই গ্রামের কাজী সুন্দর আলীর ছেলে কাজী মোজাহিদ মিয়া সদরঘাট দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল মজিদের ছেলে শেখ আব্দুল কাইয়ুমকে ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাতে শেখ আব্দুল কাইয়ুম গুরুতর আহত হন। আব্দুল কাইয়ুমকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল কাইয়ুমকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে আব্দুল কাইয়ুমের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ও গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এবিষয়ে নিহত শেখ আব্দুল কাইয়ূমের স্ত্রী শেখ মিনা বেগম বলেন, তার স্বামী ইফতারের পরে মসজিদে নামাজ পড়তে যান। এই বলেন আগামীকাল ( শনিবার) ঈদের বাজার করবেন, তার ছেলে মেয়েদের জন্য নতুন পোষাক আনবেন। রাতে হঠাৎ খবর আসে পাশের বাড়ির লোকজন মারপিট করছে। আর আমি জানি না।
“আমি কারে নিয়ে ঈদ করমু, কে আমার পুয়াপুরিরের ( ছেলে মেয়ে) ঈদের কাপড় আইন্না দিবু আর কে পালবু আমারের” ‘কইলানো আজকে ঈদের বাজারে নতুন কাপড় কিনবা’ কে আমরারের কাপড় কিনিয়া দিবু ‘এখন আমরারের তইয়া তাইন নতুন কাপড় পইড়া যাইনগি দেখি’ এই বলে মুর্চা যাচ্ছেন।
নিহত শেখ কাইয়ুমের ১ ছেলে ২ মেয়ে, ছেলের নাম শেখ নাঈম (১৮) মেয়ে শেখ সাথী বেগম(১৫) ও শেখ জ্যোতি বেগম (৮) তারা বাবাকে হারিয়ে নির্বাক। এবিষয়ে শেখ সাথী বেগম বলেন, আমার আজকে চলে গেছেন তাকে নিয়ে ঈদ করতে পারবো না, নতুন কাপড় পড়তে পারবো না, আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই,খুনিদের ফাঁসি দাবি করছি। তারা সবার সামনে আমার বাবাকে হত্যা করেছে।
নিহত কাইয়ুমের বড় ভাতিজা শেখ তারেক আহমদ বলেন, আমরা লাশ দাফনের পর, পারিবারিক পরামর্শ করে রাতে থানায় মামলা করবো। এখনো মামলা করা হয়নি।
এব্যাপারে কাজী সুন্দর আলীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মসজিদে ইত্তেকাফে ছিলাম, আমার ছেলের সাথে রাস্তায় কাইয়ুম ভাই কথা কাটাকাটি হয় সে কেন এমন করলো আমি জানিনা।আমি এত্তেকাফ রেখে পালিয়ে এসেছি।
দেবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ রিয়াজ নাদির সুমন জানান- ঈদগাহের বিরোধ ও ঈদের জামাত নিয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে আব্দুল কাইয়ুম নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আব্দুল কাইয়ুম এলাকার একজন নামাজি ও আমলদার মানুষ ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন- সদরঘাট গ্রামে ঈদের জামাত পড়া নিয়ে আলোচনাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে, এখনও মামলার এজাহার নবীগঞ্জ থানায় দেওয়া হয়নি বাদী পক্ষ বলছেন রাতে এজাহার দিবেন। আমরা সন্দেহজনক আসামি ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান করে তাদেরকে পাইনি। আসামিদের ধরার জন্য অভিযান চলমান আছে, গ্রামের পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Leave a Reply